৫৮তম জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত জগদগুরু রামভদ্রাচার্য — রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে বিজ্ঞান ভবনে ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান
অভিনন্দন জানানো হল গুলজারকেও, রাষ্ট্রপতির আহ্বান—সাহিত্যে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ হোক ভবিষ্যতের পথনির্দেশ
২০২৫ সালের ১৬ই মে, নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে এক মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ৫৮তম জ্ঞানপীঠ পুরস্কার প্রদান করলেন বিশিষ্ট সংস্কৃত পণ্ডিত ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব জগদগুরু রামভদ্রাচার্যজিকে। ভাষণ দিতে উঠে রাষ্ট্রপতি তাঁর অসামান্য কৃতিত্বের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং সঙ্গে সঙ্গে গুলজারজিকেও পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য শুভেচ্ছা জানান যিনি শারীরিক কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, গুলজারজি দ্রুত আরোগ্য লাভ করে আগামীতেও তাঁর সৃষ্টিশীলতা ও মনন দিয়ে সমাজ, সাহিত্য ও দেশের সেবায় ব্রতী থাকবেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সাহিত্য কেবলমাত্র শিল্পের উপাদান নয়, এটি সমাজকে জাগ্রত করে, ঐক্যবদ্ধ করে। উনিশ শতকের সামাজিক নবজাগরণ থেকে শুরু করে বিংশ শতকের স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত—সাহিত্য ও কবিতার মাধ্যামে মানুষ একত্রিত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, প্রায় দেড়শো বছর ধরে ‘বন্দে মাতরম্’ গানটি ভারতভক্ত সন্তানের মনে জাগরণ সৃষ্টি করে এসেছে এবং চিরকাল করে যাবে। বাল্মীকি, ব্যাস ও কালিদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরন্তন সাহিত্যে আজও ভারতীয়তার প্রাণস্পন্দন ধরা পড়ে—এই প্রাণই আমাদের জাতিসত্তার কণ্ঠস্বর।
তিনি ভারতীয় জ্ঞানপীঠ ট্রাস্টকেও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, ১৯৬৫ সাল থেকে ভারতীয় ভাষার বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের সম্মানিত করার যে ধারাবাহিকতা ট্রাস্ট বজায় রেখেছে, তাতে পুরস্কারের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থেকেছে। তাঁর মতে, সাহিত্যিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে জ্ঞানপীঠ কর্তৃপক্ষ সব সময় যথার্থ মূল্যায়ন করেছে, যা ভারতীয় সাহিত্যের গর্ব।
নারী সাহিত্যিকদের প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, আশাপূর্ণা দেবী, অমৃতা প্রীতম, মহাদেবী বর্মা, কুররাতুল-আইন-হায়দার, মহাশ্বেতা দেবী, ইন্দিরা গোস্বামী, কৃষ্ণা সোবতি ও প্রতিভা রায়—এই বিশিষ্ট নারীরা ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতিকে এক অনন্য সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছেন ও অনুভব করেছেন। তিনি আহ্বান জানান, আমাদের মেয়েরা ও বোনেরা সাহিত্যে আরও বেশি করে অংশগ্রহণ করুক এবং সামাজিক ভাবনায় নতুন মাত্রা আনুক।
শেষে জগদগুরু রামভদ্রাচার্যজির প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, দৃষ্টিশক্তিহীনতা সত্ত্বেও তাঁর সাহিত্যসাধনা, আধ্যাত্মিকতা ও সমাজসেবার পরিসর অভূতপূর্ব। তিনি এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা, যাঁর জীবন আগামী প্রজন্মের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে সাহিত্যসৃষ্টি, সমাজগঠন এবং জাতি নির্মাণের পথে। তাঁর কর্মযজ্ঞ এক ঐশ্বরিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে আমাদের সাহিত্যে নবআলোক নিয়ে এসেছে।
এই অনুষ্ঠানটি ছিল কেবলমাত্র একটি পুরস্কার প্রদানের মঞ্চ নয়, বরং সাহিত্য ও সমাজের মধ্যে গভীর সংযোগের এক মহত্ উপলক্ষ। ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে স্মরণ ও সম্মান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবারও প্রমাণ করলেন, সাহিত্য আমাদের আত্মার ভাষা—এবং সেই ভাষা আজও গর্বভরে উচ্চারিত হয় বিজ্ঞান ভবনের মঞ্চে।
Sahitya Samrat: 18th May 2025