ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ও সামরিক ঐক্যের জন্য হিন্দিকে জাতীয় ভাষা করা প্রয়োজন
ভারতের প্রতিটি রাষ্ট্রপতির সামনে, প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারির প্রজাতন্ত্র দিবসে যখন গার্ড অফ অনার গ্রহণ করা হয়, তখন যে ভাষায় কমান্ড শোনা যায়, সেটা হল হিন্দি। রাষ্ট্রপতির চেয়ারে যেই বসুন না কেন—দ্রৌপদী মুর্মু হোন বা প্রণব মুখার্জি—ভারতীয় সেনার চিফ অফ স্টাফ তাঁদের সামনে হিন্দিতেই রিপোর্ট করেন, হিন্দিতেই তাঁদের আদেশ পৌঁছয়। এর থেকে আর বড় প্রতীক কিছু হতে পারে না যে হিন্দি আজ ভারতের ‘ডিফ্যাক্টো’ (de-facto) জাতীয় ভাষা, কারণ এটি সেনাবাহিনীর কমান্ডিং এবং রিপোর্টিং ভাষা।
হিন্দি হল সেই ভাষা, যা দেশের সবচেয়ে বড় সংগঠিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রতিষ্ঠান—ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখ। দেশের দক্ষিণের সৈনিক, পূর্ব ভারতের বাঙালি বা ওড়িয়া, উত্তর-পূর্বের নাগা বা মিজো, পশ্চিমের রাজপুত বা গুজরাতি—সবাইকে এক সুরে বাঁধার জন্য দরকার একটি অভিন্ন ভাষা, আর সেই জায়গাটি নিয়েছে হিন্দি। এমনকি সেনার ভিতরে ভিন্ন রেজিমেন্টে যদি কখনো কোনো আঞ্চলিক ভাষার ছোঁয়া থাকে, যেমন গোরখা রেজিমেন্টে নেপালি, মাদ্রাজ রেজিমেন্টে তামিল বা তেলুগু, সিক রেজিমেন্টে পাঞ্জাবি—তবু আন্তঃরেজিমেন্ট কমিউনিকেশনে হিন্দি-ই মান্য।
তবে শুধু হিন্দি নয়, ইংরেজিও এই ভাষাগত কাঠামোর অপরিহার্য অঙ্গ। অফিসিয়াল রিপোর্ট, প্রযুক্তিগত নির্দেশ, আন্তর্জাতিক সমন্বয়, এবং আধুনিক হাইটেক যুদ্ধে ইংরেজি ছাড়া উপায় নেই। যেমন—NDA (National Defence Academy) বা IMA (Indian Military Academy)-তে ট্রেনিংয়ের ভাষা ইংরেজি, বিদেশি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুগ্ম মহড়া চালাতে গেলে ইংরেজি লাগে, UN Peacekeeping মিশনে যেতে গেলে ইংরেজির দরকার। উদাহরণস্বরূপ, “Alpha Company, move to Grid Reference 456123, over.”—এ রকম কমান্ড আমাদের সেনারা দিব্যি ব্যবহার করে। আবার, হিন্দির ক্ষেত্রেও সহজ এবং শক্তিশালী কমান্ড যেমন “सेना, आगे बढ़ो!” বা “दो नंबर प्लाटून, चौकी पर कब्जा करो!” এমন আদেশ প্রতিদিন উচ্চারিত হয়।
এ ছাড়াও, সামরিক ভাষায় রয়েছে নির্দিষ্ট রেডিও শব্দচয়ন—NATO phonetic alphabet যেমন “Alpha, Bravo, Charlie”, যাতে শব্দ বিভ্রান্তি কমে। সংখ্যা উচ্চারণে ‘Nine’ না বলে ‘Niner’ বলা হয়, যাতে রেডিও তরঙ্গে পরিষ্কারভাবে পৌঁছয়। কমান্ড দেওয়ার গঠনেও রয়েছে একটা সুস্পষ্ট ছাঁচ—”Unit → Action → Location → Time → Additional Info”। এই হিন্দি-ইংরেজির যুগলবন্দী শুধু ভারতের একক পরিচিতি নয়। আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও অনেক রাষ্ট্র তাদের নিজস্ব সামরিক ভাষা বেছে নিয়েছে, এবং সেখানেও এই ভাষার নির্বাচন একটা সাংস্কৃতিক কৌশল।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, একদৃষ্টে দেখলে, ঠিক ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিচ্ছবি। তবে ভাষার দিক থেকে এক সূক্ষ্ম পার্থক্য তাকে আলাদা করে তোলে—তাদের মূল কমান্ড এবং রিপোর্টিং ভাষা হল উর্দু, কিন্তু পাশাপাশি ইংরেজি ব্যবহার হয় বিপুলভাবে, বিশেষ করে আনুষ্ঠানিক, কারিগরি ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগে।
যখন এক জুনিয়র অফিসার সীমান্তে দাঁড়িয়ে সৈন্যদলের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে—“فوج، تیار ہو!” (ফৌজ, তৈয়ার হো! – “সেনা, প্রস্তুত হও!”)—তখন সেটা শুধু আদেশ নয়, সেটা পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ঐক্যের প্রকাশ। কারণ পাঞ্জাবি, সিন্ধি, বেলুচি, পশতুন—এই সব আঞ্চলিক বিভাজনের ওপরে একমাত্র উর্দুই এমন একটি স্তম্ভ, যা সামরিক কমিউনিকেশনের ভিত্তি রচনা করে। ছোট পদমর্যাদার কমান্ড, মাঠে-ময়দানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ার মুহূর্তে, উর্দুই একমাত্র ভরসা।
তবে একটু উপর দিকে উঠে গেলেই দৃশ্যপট বদলে যায়। ইংরেজির প্রবল উপস্থিতি চোখে পড়ে অফিসার ট্রেনিংয়ে, ম্যানুয়ালে, রিপোর্টিং পদ্ধতিতে, এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে। যেমন, “Bravo Company, move to Grid Alpha-5, over.”—এমন একটি আদেশে ব্রিটিশ সামরিক ঐতিহ্যের ছায়া দেখা যায়, NATO-এর ছাঁচে তৈরি যোগাযোগরীতি পাকিস্তানও গ্রহণ করেছে। এটি কেবল ভাষাগত নয়, একটি কূটনৈতিক ভূমিকার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পাকিস্তান অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সামরিক মিত্র ছিল।
রেডিওতে যখন কথোপকথন হয়, তখন সেখানেও ব্যবহার হয় NATO-র ফনেটিক অ্যালফাবেট—Alpha, Bravo, Charlie—রেডিও তরঙ্গে শব্দ বিকৃত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রুখতে। সংখ্যাগুলো উচ্চারিত হয় ইংরেজিতে—তবে সেগুলোও খানিকটা পাল্টানো, যেমন “Three” না বলে “Tree” বলা হয়, যাতে রেডিও সিগনালে ‘থ্রি’ আর ‘ফ্রি’ এর মধ্যে বিভ্রান্তি না হয়।
যদিও উর্দুই বাহিনীর মেরুদণ্ডস্বরূপ, কিছু নির্দিষ্ট ইউনিটে, বিশেষ করে Frontier Corps বা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের ইউনিটগুলোয়, মাঝে মাঝে পশতু বা পাঞ্জাবি কথ্যত ব্যবহৃত হয়—এই আঞ্চলিক ভাষাগুলো সৈন্যদের মনোবল ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু উচ্চতর সামরিক আদেশে বা আন্তঃবাহিনী সমন্বয়ে ভাষা আবার ফিরে যায় উর্দু ও ইংরেজিতে।
এর পেছনে যুক্তি খুব পরিষ্কার—উর্দু দেশের সমস্ত অঞ্চলের সেনাদের জন্য বোধগম্য এবং সহজ, আর ইংরেজি ব্যবহৃত হয় বিশ্বমঞ্চে দাঁড়াবার জন্য, এবং হাইটেক কমিউনিকেশন, স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং, সাইবার অপারেশন ও আধুনিক যুদ্ধ ব্যবস্থার জন্য।
একটা কমান্ড যদি উদাহরণ হিসেবে দিই, তাহলেই বোঝা যাবে কেমন করে এই দুটি ভাষা হাত ধরাধরি করে চলে—
উর্দুতে: “تمام دستے، حملہ کریں!”
(Tamam dastay, hamla karein! – “সব ইউনিট, আক্রমণ করো!”)
আর ইংরেজিতে: “Sierra-1 to Base, enemy spotted at Grid 345-678, request artillery fire, over.”
এই ভাষার দ্বৈতব্যবহার একদিকে যেমন ঐতিহ্যকে ধরে রাখে, তেমনই আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার দিকেও মনোযোগ দেয়।
যদি ভারতের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে দুই দেশই একে অপরের প্রতিচ্ছবি—ভারত ব্যবহার করে হিন্দি এবং ইংরেজি, পাকিস্তান ব্যবহার করে উর্দু এবং ইংরেজি। দুই দেশের সামরিক কাঠামোর ভিতর দিয়ে জাতীয় পরিচয়, ভাষার রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং সাংস্কৃতিক মনস্তত্ত্ব একইসঙ্গে কাজ করে।
রুশ সামরিক বাহিনীর আদেশ ও প্রতিবেদন ব্যবস্থার একমাত্র ভাষা হলো রুশ (Russian)। এই ভাষাটি কঠোরভাবে মান্য করা হয় যাতে সামরিক যোগাযোগে শৃঙ্খলা, স্পষ্টতা ও গোপনীয়তা বজায় থাকে। কমান্ড থেকে রেডিও বার্তা পর্যন্ত সব কিছু রুশ ভাষাতেই পরিচালিত হয়, এমনকি অ-রুশ জাতিগোষ্ঠীর ইউনিটগুলিতেও (যেমন চেচেন বা তাতার সেনা)। উদাহরণস্বরূপ: “Всем приготовиться к атаке!” (“সবাই আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হোন!”)
রেডিও যোগাযোগে ব্যবহৃত হয় রুশ ফোনেটিক অ্যালফাবেট: যেমন Анна (Anna) = A, Борис (Boris) = B। সংখ্যাও স্পষ্টভাবে বলা হয়: “один” (১), “два” (২) ইত্যাদি। সোভিয়েত যুগের কিছু কোড ও আর্জেন্টিনা যুদ্ধের পরিভাষা এখনো প্রচলিত: যেমন “Чёрный тюльпан” (“কালো টিউলিপ”) অর্থাৎ মৃতদেহ পরিবহণকারী বিমান। আফগানিস্তান যুদ্ধকালীন বিদ্রোহীদের বোঝাতে “духи” (“আত্মা”) শব্দটি ব্যবহৃত হতো।
প্রতিটি আদেশ একটি নির্দিষ্ট কাঠামো মেনে চলে: কে → কী কাজ → কোথায় → কখন → নিশ্চিত করুন।
উদাহরণ: “Первая рота, занять позицию на высоте 237, к 14:30, доложите!” (“প্রথম কোম্পানি, উচ্চতা ২৩৭-এ অবস্থান নাও, ১৪:৩০-এর মধ্যে, প্রতিবেদন করো!”)
গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি দিক হলো ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ও গোপনীয়তা। Azart, Aqueduct নামক এনক্রিপ্টেড রেডিও সিস্টেম ব্যবহার করে বার্তা আদান-প্রদান হয়। প্রযুক্তি-সংক্রান্ত পরিভাষায় “РЭБ” (Radio-Electronic Warfare) এবং “Заслон” (জ্যামার) কথাগুলি ব্যবহৃত হয়।
একমাত্র রুশ ভাষার ব্যবহার কেন?
মধ্যনির্দেশ নিয়ন্ত্রণ: রাশিয়ার বিস্তৃত ভূখণ্ডে ভুল-যোগাযোগ ঠেকাতে। নিরাপত্তা: বাইরের কেউ যেন বার্তা বুঝতে না পারে। ঐতিহ্য: সোভিয়েত ইউনিয়নের ঐতিহ্যগত সামরিক একরূপতা।
উদাহরণ কমান্ড: “Огонь по координатам 48.742, 44.536, огонь!” – (“৪৮.৭৪২, ৪৪.৫৩৬ স্থানাঙ্কে গুলি চালাও!”), “Приём!” / “Понял!” – (“বার্তা গ্রহণ করো!” / “বোঝা গেছে!”)
NATO সেনাবাহিনীর তুলনায় রুশ বাহিনীর পার্থক্য:
| বৈশিষ্ট্য | রাশিয়া | ন্যাটো |
|---|---|---|
| ভাষা | শুধুমাত্র রুশ | ইংরেজি + স্থানীয় ভাষা |
| ফোনেটিক | সায়রিলিক (Анна, Борис) | আলফা, ব্রাভো |
| গোপনীয়তা | গাঢ় এনক্রিপশন, পুরনো কোড | নিয়মিত এনক্রিপশন |
| স্ল্যাং | সোভিয়েত-পরিচিত পরিভাষা | “রজার”, “ট্যাঙ্গো”-জাতীয় |
অনন্য দিক, “Z” এবং “V” প্রতীক: ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীন এগুলি ইউনিট আইডেন্টিফায়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। নন-ভার্বাল সংকেত: বিশেষ অভিযানে হাতের ইশারা, ফ্লেয়ার, এমনকি রেডিওর নির্দিষ্ট ক্লিক ব্যবহৃত হয়।
ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (IDF)-এর আদেশ ও প্রতিবেদনমূলক ভাষা প্রধানত হিব্রু হলেও আরবি, ইংরেজি ও রুশ ভাষাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে—কারণ ইজরায়েল একটি বহু-জাতিগত রাষ্ট্র এবং এর আন্তর্জাতিক সামরিক সম্পর্কও বিস্তৃত।
আইডিএফ-এর সমস্ত সরকারি আদেশ, প্রশিক্ষণ, এবং রেডিও যোগাযোগ আধুনিক হিব্রু ভাষাতেই সম্পন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি আদেশ হতে পারে: “כל הכוחות, תתכוננו להתקפה!” (Kol ha-koachot, hitkonenu le-hitkana!) যার মানে “সব বাহিনী, আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হও!”
আরবি ভাষার ব্যবহার মূলত গোয়েন্দা বিভাগ (আমান), সীমান্ত টহল এবং আরব সংখ্যালঘু ইউনিটের মধ্যে দেখা যায়—যেমন দ্রুজ বাহিনী। উদাহরণস্বরূপ, বলা হয়: “استعدوا للتحرك!” (Ista’iddū lil-taharruk!) – “চলাফেরার জন্য প্রস্তুত হও!”
আন্তর্জাতিক অভিযানের ক্ষেত্রে ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনায় ইংরেজির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ মহড়া (যেমন Juniper Cobra) বা বিমান বাহিনীর কর্মকাণ্ডে ইংরেজি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ পাইলট ইংরেজিতে পারদর্শী, যাতে তারা ন্যাটোর মান অনুসরণ করতে পারেন। একটি সাধারণ কমান্ড হতে পারে: “Ghost Lead, bandits at 10 o’clock, engage!”
রাশিয়ানভাষী অভিবাসী (ওলিম) যেহেতু আইডিএফ-এ উল্লেখযোগ্য সংখ্যা, তাই কিছু ইউনিটে রুশ ভাষার অনানুষ্ঠানিক ব্যবহার দেখা যায়। একটি আদেশ হতে পারে: “Внимание, занять позиции!” (Vnimanie, zanyat’ pozitsii!) – “সতর্কতা, অবস্থান গ্রহণ করো!”
আইডিএফ একটি পরিবর্তিত ন্যাটো ধ্বনিতত্ত্ব ব্যবহার করে, যেমন “D”-এর জন্য “David” এবং “Y”-এর জন্য “Yigal”। সংখ্যা উচ্চারণেও স্পষ্টতা বজায় রাখা হয়—যেমন “তিন” বোঝাতে “shalosh” ব্যবহৃত হয়, “shlosha” নয়, যাতে বিভ্রান্তি না ঘটে।
সামরিক হিব্রুতে ব্যবহৃত কিছু বিশেষ শব্দ ও সংক্ষিপ্ত রূপ আছে, যাকে বলে “Ratzon”। যেমন, “Pazam” (פז”ם) শব্দটি “Pikud Zarug Mivtza”-এর সংক্ষিপ্ত রূপ—অর্থাৎ “অভিযানে প্রস্তুত কমান্ড”। আবার “Aluf” (אלוף) শব্দটি একদিকে জেনারেল পদ বোঝালেও, কথ্য ভাষায় এর মানে হয় “অসাধারণ”।
হিব্রু ভাষার প্রাধান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণে—জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ; একইসঙ্গে এটি নিরাপত্তার দিক থেকে কার্যকর, কারণ আরবি ও রুশ ভাষা নির্বাচিত প্রসঙ্গে সীমিতভাবে ব্যবহৃত হয়; এবং, এটি চাপের মুহূর্তে ভুল কমায়, যেমন গাজা সীমান্তে অভিযানের সময়।
কমান্ডের কয়েকটি উদাহরণ হতে পারে: পদাতিক ইউনিটে: “מחלקה א’, לנוע צפונה, עכשיו!” (Maklaka Aleph, la’no’a tzafona, akhshav!) – “১ম প্লাটুন, উত্তরের দিকে এখনই অগ্রসর হও!”। বিমান বাহিনীতে ইংরেজি-হিব্রুর মিশ্রণও দেখা যায়: “Tiger 1, fox two on MiG-21, over.” যার হিব্রু অনুবাদ: “טייגר 1, ירי טיל על מיג-21।”
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়—আইডিএফ-এর মূল ভাষা হিব্রু হলেও দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে আরবি, ইংরেজি ও রুশ ব্যবহৃত হয়; অন্যদিকে, আমেরিকান বাহিনীতে ইংরেজি ও স্প্যানিশ এবং রুশ বাহিনীতে রুশ ভাষা এবং কিছু সংখ্যালঘু ভাষার ব্যবহার সীমিতভাবে দেখা যায়। ধ্বনিতত্ত্বের ব্যবস্থাও আলাদা—ইজরায়েল “David, Yigal” ব্যবহার করে, মার্কিন সেনাবাহিনী “Alpha, Bravo” এবং রুশ সেনা “Анна, Борис” ব্যবহার করে। আইডিএফ-এ ব্যবহৃত কিছুলোকপ্রিয় স্ল্যাং যেমন “Pazam”, অন্যদিকে মার্কিন সেনাবাহিনীতে “Oscar Mike” (মানে, On the Move), আর রুশ সেনাবাহিনীতে সোভিয়েত আমলের কিছু শব্দ ব্যবহৃত হয়, যেমন “духи”।
আইডিএফ-এর অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে সাইবার ও প্রযুক্তি-ভিত্তিক ইউনিটে (যেমন ইউনিট 8200) ইংরেজি শব্দের ব্যাপক ব্যবহার। এছাড়া, গুপ্তচর কার্যকলাপ চালানো ইউনিট যেমন “Duvdevan”-এ মৌখিক ভাষা ব্যবহার না করে হ্যান্ড সিগন্যালের মাধ্যমে আদানপ্রদান করা হয়—যা তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করে।
চীনা সামরিক বাহিনী, অর্থাৎ পিপল্স লিবারেশন আর্মি (PLA)-র আদেশ ও প্রতিবেদন দেওয়ার ভাষা হল স্ট্যান্ডার্ড ম্যান্ডারিন চাইনিজ (普通话 Pǔtōnghuà), যা বেইজিং উপভাষার উপর ভিত্তি করে গঠিত। এই ভাষা ব্যবহারের ফলে চীনের ভাষাগত বৈচিত্র্যের মধ্যেও একতা বজায় থাকে।
PLA কঠোর ও আনুষ্ঠানিক সামরিক পরিভাষা ব্যবহার করে যাতে আদেশ ও প্রতিবেদনগুলিতে কোনো অস্পষ্টতা না থাকে। যোগাযোগে স্পষ্টতা রক্ষার জন্য, বিশেষ করে রেডিও ব্যবহারে, PLA একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা উচ্চারণ প্রণালী ও ধ্বন্যাত্মক বর্ণমালা ব্যবহার করে। যেমন, “১” বোঝাতে yī-এর পরিবর্তে yāo 幺 ব্যবহার করা হয়, যাতে অন্য সংখ্যার সঙ্গে বিভ্রান্তি না হয়। আবার বর্ণের ক্ষেত্রেও চীনের নিজস্ব ধ্বন্যাত্মক বর্ণমালা আছে—যেমন B বোঝাতে বলা হয় Běi 北—যা NATO-র “Alpha, Bravo”-এর মতোই কার্যকর।
PLA-র আদেশ প্রদানের কাঠামো অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও স্তরভিত্তিক, যেখানে আদেশের ধারা হয়: কে → কী কাজ → কোন লক্ষ্য → কখন/কোথায়। অনেক আদেশেই কমিউনিস্ট পার্টির মতাদর্শের ছাপ থাকে—যেমন বলা হয় “মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব রক্ষা করো।”
একটি সাধারণ আদেশ হতে পারে: “全体注意,向东前进,执行任务!” (Quántǐ zhùyì, xiàng dōng qiánjìn, zhíxíng rènwu!) যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়: “সকল ইউনিট মনোযোগ দাও, পূর্বদিকে অগ্রসর হও, মিশন সম্পন্ন করো!”
চীনে ম্যান্ডারিন ব্যবহারের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল জাতীয় ঐক্য। ৫০ শতাংশেরও বেশি চীনা সেনা স্থানীয় উপভাষায় কথা বলেন—যেমন ক্যান্টনিজ, সাংহাইনিজ ইত্যাদি—ফলে ম্যান্ডারিন ব্যবহার করলে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা কমে যায়। তাছাড়া, এই কঠোর ভাষাব্যবহার নীতির ফলে শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কর্মকাণ্ডে ভুলের পরিমাণ হ্রাস পায়।
ভারতের মতো বহুভাষিক দেশে জাতীয় নিরাপত্তা, সামরিক ঐক্য ও অপারেশনাল কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে একটি অভিন্ন কমান্ড ও যোগাযোগভাষার প্রয়োজন। চীনের মতো শক্তিধর রাষ্ট্র তার সামরিক বাহিনীতে স্ট্যান্ডার্ড ম্যান্ডারিন ব্যবহার করে, যাতে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষাভাষী সেনাদের মধ্যে কোনো ধোঁয়াশা না থাকে। একইভাবে ভারতের প্রতিরক্ষা কাঠামোতেও একমাত্রিক ভাষা ব্যবস্থার অভাব অপারেশনাল জটিলতা তৈরি করতে পারে। এই প্রেক্ষিতে হিন্দিকে ভারতের জাতীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও সামরিক সংস্কৃতির জন্য অপরিহার্য।
প্রথমত, হিন্দি দেশের একটি বৃহৎ অংশে কথ্য ভাষা এবং বেশিরভাগ সেনার মাতৃভাষা বা দ্বিতীয় ভাষা। সেনা, বিমান ও নৌ বাহিনীতে হিন্দি আগে থেকেই মৌখিক ও লিখিত আদেশে ব্যবহার হয়, কিন্তু এটি আনুষ্ঠানিক জাতীয় ভাষা না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে রাজ্যভিত্তিক বা বিভাগীয় বিভ্রান্তি দেখা যায়। একমাত্র জাতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দিকে প্রতিষ্ঠা করলে সমস্ত বাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীগুলিতে আদেশ প্রদানে ঐক্য আসবে। অপারেশনাল পরিস্থিতিতে স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত ও সাংগঠনিক হিন্দি কমান্ড কাঠামো গড়ে তোলা যাবে।
দ্বিতীয়ত, চীনের মতো ভারতেও বিভিন্ন রাজ্যের সেনারা নিজেদের নিজস্ব ভাষায় অভ্যস্ত, যা অপারেশন চলাকালে বা উচ্চমাত্রার সংবেদনশীল আদেশের সময় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এই অবস্থায় হিন্দির ব্যবহার সকলকে একটি ভাষায় অভ্যস্ত করে তোলে এবং রেডিও কমিউনিকেশন বা সংকেত ভাষায়ও একই রকম নির্ভরযোগ্যতা তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, হিন্দিতে সংখ্যার উচ্চারণ ও সামরিক সংকেত শব্দ স্পষ্ট ও নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব, যেমন ‘এক’ না বলে ‘একা’ বলা, বা ফনেটিক ‘बी’ বলতে ‘बिहार’ ব্যবহার করা ইত্যাদি।
তৃতীয়ত, জাতীয় ঐক্য এবং সাংস্কৃতিক সংহতির দিক থেকেও হিন্দির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় সেনাবাহিনী শুধু যুদ্ধ করে না, জাতির মূল স্তম্ভ হিসেবেও কাজ করে। সেনার ভাষা যদি জাতীয় সংস্কৃতির প্রতিফলন না হয়, তবে জনগণের সঙ্গে তাদের মানসিক সংযোগ দুর্বল হয়। হিন্দি ভারতের বহু প্রাচীন ঐতিহ্য, বীরগাথা, জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ভাষা। এই ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করলে জাতীয়তাবোধ আরও গভীর হবে, সেনার মধ্যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংহতিও দৃঢ় হবে।
সবশেষে, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা ও কমান্ড সিস্টেমে ভাষার ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দিকে জাতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করলে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কমান্ড ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে একীকরণ সম্ভব হবে। ভারতের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও সামরিক সংস্কৃতি এই ভাষার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল হতে চলেছে।
সবশেষে বলা যায়, রাসবিহারী বসু ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজে হিন্দি কমান্ড লাইন ও হিন্দি রিপোর্টিং সিস্টেম চালু করেছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন যে একটি ঐক্যবদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জাতীয় সেনা গঠনের জন্য ভাষার একতা অপরিহার্য। আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিটি কমান্ড, স্যালুট, আদেশ ও যুদ্ধঘোষণা হিন্দিতে ছিল, যাতে সমস্ত ভাষাভাষী ভারতীয় সেনারা এক অভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামরিক পরিচয়ের অধীন একসঙ্গে লড়তে পারে। এটি শুধু সামরিক কৌশলের দিক থেকেই নয়, বরং জাতীয় ঐক্য ও আত্মপরিচয়ের প্রশ্নেও এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ছিল। সেই ঐতিহ্য আজকের ভারতীয় সেনার ভাষানীতিতে পরিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত না হলেও, ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ অবশ্যই সেখানে নিহিত।
Thursday, August 7, 2025
সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড এবং রিপোর্টিং