২০২৫ সালের পুলিৎজার পুরস্কার: সাহিত্য-সাংবাদিকতা

2025 Pulitzer Prize

সাংবাদিকতায় শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি

জনসেবা বিভাগে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে প্রো-পাবলিকা, যার সাংবাদিক কাভিতা সুরানা, লিজি প্রেসার, কাসান্দ্রা জারামিলো এবং স্টেসি ক্রানিটজের তৎপর ও তাৎক্ষণিক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যে কঠোর গর্ভপাত আইন এবং অস্পষ্ট “মায়ের জীবনের ঝুঁকি” ব্যতিক্রম ধারার কারণে গর্ভবতী নারীরা চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই বিভাগে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বোস্টন গ্লোব (OCCRP-র সহায়তায়) এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের ডেভ ফিলিপসের টানা অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন।

ব্রেকিং নিউজ রিপোর্টিংয়ের জন্য ওয়াশিংটন পোস্টের দল পুরস্কার পেয়েছে জুলাই ১৩-তে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের হত্যাচেষ্টার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাৎক্ষণিক, বিশ্লেষণধর্মী ও শ্রুতিমধুর অডিও-ভিজ্যুয়াল বিশ্লেষণসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য। চূড়ান্ত তালিকায় ছিল অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এবং উত্তর ক্যারোলিনার দুই পত্রিকা।

অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতায় পুরস্কার পেয়েছে রয়টার্স, যারা যুক্তরাষ্ট্রে ও বিদেশে নিষ্ক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সুযোগে কীভাবে ভয়ানক ফেন্টানিল মাদক সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে তা তুলে ধরেছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ও ফ্রন্টলাইন-এর যৌথ কাজ।

ব্যাখ্যামূলক রিপোর্টিংয়ে পুরস্কার পেয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের আজম আহমেদ, ম্যাথিয়ু অ্যাইকিনস এবং ক্রিস্টিনা গোল্ডবাউম, যাঁরা আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতার পেছনের ইতিহাসকে ভয়ানক মিলিশিয়া সমর্থনের আলোকে বিশ্লেষণ করেছেন। চূড়ান্ত তালিকায় ছিল পাবলিক ইন্টেগ্রিটি সেন্টার, রিভিল, মাদার জোন্স এবং প্রো-পাবলিকার দল।

স্থানীয় রিপোর্টিংয়ে বিজয়ী হয়েছে দ্য বাল্টিমোর ব্যানার এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের যৌথ দল। তারা বাল্টিমোরের ফেন্টানিল সংকট, বিশেষ করে বয়স্ক কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর তার প্রভাব নিয়ে সংবেদনশীল অনুসন্ধানমূলক সিরিজ তৈরি করেছে। আরও প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল এবং সিয়াটল টাইমসের টিম।

জাতীয় রিপোর্টিংয়ে পুরস্কার গেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে, যারা ইলন মাস্কের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত রূপান্তর, মাদক ব্যবহার এবং ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার গোপন কথোপকথনের মতো বিষয় তুলে ধরেছে। ফাইনালিস্ট ছিল সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল ও ওয়াশিংটন পোস্ট।

আন্তর্জাতিক রিপোর্টিংয়ে জয়ী নিউ ইয়র্ক টাইমসের ডেকলান ওয়ালশ ও সহকর্মীরা, যারা সুদানের সংঘর্ষ, স্বর্ণ ব্যবসা ও যুদ্ধাপরাধের ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ওয়াশিংটন পোস্ট।

ফিচার লেখায় পুরস্কার পেয়েছেন মার্ক ওয়ারেন (এসকোয়ার), যিনি আত্মহত্যাকারী এক খ্রিস্টান পাদরি ও মেয়রের অন্তর্জীবন গভীর সহানুভূতির সঙ্গে তুলে ধরেছেন। চূড়ান্ত তালিকায় ছিল নিউ ইয়র্কার-এর আনন্দ গোপাল এবং মার্শাল প্রজেক্ট-এর জো সেক্সটন।

মন্তব্য বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন নিউ ইয়র্কার-এর মোসাব আবু তোহা, যিনি গাজা যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে যুদ্ধবিধ্বস্ত জীবনের অন্তরঙ্গ ও সাহসী বিবরণ দিয়েছেন। আরও ছিলেন লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের গুস্তাভো আরেল্লানো এবং ওয়াশিংটন পোস্টের জেরি ব্রুয়ার।

সমালোচনামূলক লেখায় পুরস্কার পেয়েছেন ব্লুমবার্গ সিটিল্যাবের আলেক্সান্দ্রা ল্যাঞ্জ, যিনি শিশু ও পরিবারের জন্য উপযোগী স্থাপত্য নিয়ে চিন্তাশীল, রচনাশৈলীর নতুন মাত্রা তৈরি করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিন ও নিউ ইয়র্কারের লেখকরা।

সম্পাদকীয় লেখায় পুরস্কার পেয়েছে হিউস্টন ক্রনিকলের রাজ মঙ্কাদ, শ্যারন স্টেইনম্যান, লিসা ফাল্কেনবার্গ ও লিয়া বিনকোভিট্জ। তারা বিপজ্জনক রেলক্রসিং নিয়ে জননিরাপত্তার প্রশ্নে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ পরিবেশন করেছেন। ফাইনালিস্ট ছিল বোস্টন গ্লোব ও নিউ ইয়র্ক টাইমস।

চিত্রিত প্রতিবেদন ও কার্টুন বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন ওয়াশিংটন পোস্টের অ্যান টেলনেস। তাঁর সূক্ষ্ম, নির্ভীক ও সৃজনশীল ব্যঙ্গচিত্র ১৭ বছরের চাকরি শেষে পদত্যাগের অনুঘটক হয়ে দাঁড়ায়। অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল দ্য বোস্টন গ্লোব ও ইনিউসোর্স.অর্গ।

ব্রেকিং নিউজ ফটোগ্রাফিতে নিউ ইয়র্ক টাইমসের ডাগ মিলস জয়ী হন, যিনি ট্রাম্পের হত্যাচেষ্টার মুহূর্তে গুলির গতিপথসহ অবিস্মরণীয় ছবি ধারণ করেন। আরও ছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস ও এজেন্স ফ্রান্স-প্রেস-এর ফটোগ্রাফি টিম।

ফিচার ফটোগ্রাফিতে পুরস্কার পেয়েছেন নিউ ইয়র্কারের মোইসেস সামান, যিনি সিরিয়ার সেদনায়া কারাগারের নির্যাতনের উত্তরাধিকার তুলে ধরেছেন। এই বিভাগে ছিলেন লিন্সি অ্যাডারিও (নিউ ইয়র্ক টাইমস) ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

অডিও রিপোর্টিংয়ে বিজয়ী হয়েছে নিউ ইয়র্কারের “In the Dark” পডকাস্ট টিম, যারা ২৫ নিরস্ত্র ইরাকি বেসামরিক নাগরিক হত্যাকাণ্ডের চার বছরব্যাপী তদন্তে মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সত্য তুলে ধরেছে। ফাইনালিস্ট ছিল ওয়ান্ডেরি, পাইনঅ্যাপল স্ট্রিট স্টুডিও এবং WNYC–Gothamist।

২০২৫ পুলিৎজার পুরস্কার: সাহিত্য, নাট্য ও সঙ্গীতে শীর্ষ কৃতিত্বের স্বীকৃতি

ফিকশন বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে পার্সিভ্যাল এভারেটের James, যেখানে মার্ক টোয়েনের ‘হাকলবেরি ফিন’ উপন্যাসটিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে পুনর্বিবেচনা করে, মূল চরিত্র জিমকে কেন্দ্র করে বর্ণবাদের অসারতা ও মুক্তির খোঁজ তুলে ধরা হয়েছে। ফাইনালিস্টদের মধ্যে ছিল রিটা বুলউইঙ্কেলের Headshot, স্টেসি লেভিনের Mice 1961 এবং গেল জোনসের The Unicorn Woman

নাট্য বিভাগে ব্র্যান্ডেন জ্যাকবস-জেনকিন্সের Purpose নাটকটি পুরস্কার পেয়েছে; এটি একটি আফ্রো-আমেরিকান মধ্যবিত্ত পরিবারের উত্তরাধিকার ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রজন্মান্তরের দৃষ্টিভঙ্গির সুনিপুণ অনুসন্ধান। চূড়ান্ত মনোনয়নের তালিকায় ছিল কোল এসকোলার Oh, Mary! এবং ইটামার মোসেসের The Ally

ইতিহাস বিভাগে এড্ডা এল. ফিল্ডস-ব্ল্যাকের Combee: Harriet Tubman, the Combahee River Raid, and Black Freedom During the Civil War পুলিৎজার অর্জন করেছে, যেখানে ৭৫৬ জন ক্রীতদাসের মুক্তির একক দিনের বিস্ময়কর অভিযানের প্রামাণ্য বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। চূড়ান্ত মনোনয়নে ছিল ক্যাথলিন ডুভালের Native Nations ও সেট রকম্যানের Plantation Goods

জীবনী বিভাগে জেসন রবার্টসের Every Living Thing বইটি পুরস্কৃত হয়েছে, যেখানে জীববিজ্ঞানের পথিকৃৎ লিনিয়াস ও বুফঁ–এই দুই অষ্টাদশ শতাব্দীর মনীষীর দ্বৈত জীবনী তুলে ধরা হয়েছে। মনোনীতদের মধ্যে ছিল ডেভিড গ্রিনবার্গের John Lewis: A Life ও অ্যামি রিডিং-এর The World She Edited

স্মৃতিকথা বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে টেসা হালসের Feeding Ghosts, একটি গ্রাফিক মেমোয়ার যেখানে তিন প্রজন্মের চীনা নারীর স্মৃতি, বেদনাপুঞ্জ ও পারিবারিক উত্তরাধিকার শিল্পরূপে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। মনোনীত ছিল আলেকজান্দ্রা ফুলারের Fi এবং লুসি সান্তের I Heard Her Call My Name

কবিতা বিভাগে মেরি হাওয়ের New and Selected Poems পুলিৎজার পেয়েছে; সমকালীন জীবনের নিত্য অভিজ্ঞতায় লুকিয়ে থাকা নিঃসঙ্গতা, মৃত্যু ও পবিত্রতার অন্বেষণে এই সংকলন মানবিক উপলব্ধিকে গভীর করে তোলে। অন্যান্য মনোনীত কবিতা সংকলন ছিল জেনিফার চ্যাং-এর An Authentic Life ও ডেনেজ স্মিথের Bluff

সাধারণ নন-ফিকশন বিভাগে বেঞ্জামিন নাথানসের To the Success of Our Hopeless Cause বইটি পুরস্কার পেয়েছে, যেখানে সোভিয়েত ভিন্নমতবাদীদের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস ও পুনরুত্থানের প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপিত হয়েছে। মনোনয়নপ্রাপ্ত ছিল রোলো রোমিগের I Am on the Hit List এবং র‍্যাচেল নোলানের Until I Find You

সঙ্গীত বিভাগে স্যুসি ইবারার Sky Islands রচনাটি পুলিৎজার জয় করেছে। নিউ ইয়র্কের এশিয়া সোসাইটিতে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই প্রথম পরিবেশিত এই সঙ্গীতনাট্য পরিবেশতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যের উপর ভিত্তি করে রচিত, যেখানে সঙ্গীতশিল্পীর তাৎক্ষণিক সৃষ্টিশীলতা মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। চূড়ান্ত মনোনয়নে ছিল জালালু-কালভার্ট নেলসনের Jim is Still Crowing ও জর্জ লুইসের The Comet

পুলিৎজার পুরস্কার প্রবর্তিত হয় মার্কিন সাংবাদিক জোসেফ পুলিৎজারের দ্বারা, যিনি ১৯১১ সালে মৃত্যুর পূর্বে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি তহবিল রেখে যান। ১৯১২ সালে এই অর্থে প্রতিষ্ঠিত হয় স্কুল অব জার্নালিজম, এবং ১৯১৭ সাল থেকে পুলিৎজার পুরস্কার প্রদান শুরু হয়। বর্তমানে বোর্ডের ১৮ জন সদস্যের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলির শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক ও পাঁচজন শিক্ষাবিদ ও শিল্পজগতের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য। বোর্ডের সভাপতি প্রতি বছর পর্যায়ক্রমে নির্বাচিত হন।

সাহিত্য সম্রাট: 25th May 2025


Leave a Reply